আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

আজ ৭ই এপ্রিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। আজকের দিনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৪৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘ অর্থনীতি ও সমাজ পরিষদ আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের সম্মেলন ডাকার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৪৬ সালের জুন ও জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাংগঠনিক আইন গৃহীত হয়, ১৯৪৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রথম বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালনের প্রস্তাব দেওয়া হলে তা ১৯৫০ সালে কার্যকর হয়। ১৯৫০ সালের ৭ এপ্রিল থেকে বিশ্বজুড়ে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন যা বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সচেতনতা ও উন্নতির প্রচারে প্রতিষ্ঠান ও সম্প্রদায়গুলির সচেতনতা বাড়াতে দেড় মিলিয়নের মানুষের স্বাস্থ্য পরিচর্যা এবং সমস্যার সমাধানে বিশ্বব্যাপী চেষ্টা করে। প্রতিবছর নির্দিষ্ট প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে দিনটি পালন করা হয়। এবারের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য হলো "আমার স্বাস্থ্য, আমার অধিকার"। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

এ বছর দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সেমিনার আয়োজন, স্যুভেনির প্রকাশ, স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদর্শনী, জাতীয় পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ, সড়কদ্বীপ সজ্জিতকরণ, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য কার্যক্রম।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য মানবাধিকারের অধিকারকে এগিয়ে নিতে ডব্লিউএইচও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিশ্ব এখন রোগব্যাধি, বিপর্যয় থেকে সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তনসহ একাধিক সংকটের মুখোমুখি। মানুষের স্বাস্থ্যের অধিকার উপলব্ধি করা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ’।

আঞ্চলিক পরিচালক জোর দিয়ে বলেন, ‘সবার জন্য স্বাস্থ্যের অধিকার উপলব্ধি করার অর্থ হলো এমন পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে প্রত্যেকে সর্বত্র উচ্চমানের স্বাস্থ্য সুবিধা, পরিষেবা এবং পণ্যগুলোর সুযোগ গ্রহণ করতে পারে; যা জনগণের চাহিদা, বোঝাপড়া এবং মর্যাদাকে অগ্রাধিকার দেয়। স্বাস্থ্যের অধিকার পূরণের জন্য, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্তর্নিহিত নির্ধারক উভয়ই উপলব্ধ, প্রাপ্তিযোগ্য, গ্রহণযোগ্য এবং পর্যাপ্ত মানের হওয়া উচিত’।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যসূত্র অনুসারে, দেশে উপজেলায় ৭৬ শতাংশ ও জেলায় ৩৬ শতাংশ চিকিৎসকের পদ শূন্য। এ ছাড়া উপজেলায় ১৫ শতাংশ ও জেলায় ১১ শতাংশ স্টাফ নার্স, উপজেলা ৮ শতাংশ ও জেলায় ১১ শতাংশ ফার্মাসিস্টের পদ শূন্য পড়ে আছে। জানানো হয়, কেবল নার্স ও মিডওয়াইভসদের ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুসারে প্রতি এক হাজার জনসংখ্যার জন্য ৪ দশমিক ৪৫ জন থাকার কথা থাকলেও দেশে আছেন মাত্র ১ দশমিক ২৭ শতাংশ।

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. এ এফ এম রুহুল হক এমপি বলেন, ‘আমাদের অবকাঠামো, কমিনিউটি ক্লিনিক সারা বিশ্বে অতুলনীয়। তবে আমাদের ব্যবস্থাপনায় আরও জোর দিতে হবে। রোগ প্রতিরোধে নজর বাড়াতে হবে। কমিউনিটি পর্যায় থেকে উপজেলা, উপজেলা পর্যায় থেকে জেলা, জেলা থেকে বিভাগে এবং পর্যায়ক্রমে রাজধানীতে রেফারেল সিস্টেম কার্যকর করা জরুরি’

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ ই মাহবুব বলেন, ‘গত কয়েক বছরে দেশের স্বাস্থ্যসেবার যেমন ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে, তেমনি অনেক অব্যবস্থাপনার নজিরও মিলছে। রোগীদের আস্থার সংকটও আছে। চিকিৎসকরা একদিকে তাদের জীবন নিবেদিত করে কাজ করছেন, অন্যদিকে কিছু সংখ্যকের দায়িত্বহীনতার ফলে দায় চাপছে পুরো চিকিৎসক সমাজের ওপর। মানুষকে এখন স্বাস্থ্যসেবা কিনে নিতে হচ্ছে। মানুষ হিমশিম খাচ্ছেন খরচ মেটাতে গিয়ে। সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোতে নানা সংকট লেগেই আছে’।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতির অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘মানুষ একদিকে যেমন সেবার জন্য ছুটে বেড়াচ্ছেন, দিনে লাখো মানুষ সেবা নিচ্ছেন, আবার তাদের আস্থার প্রশ্নটিও বড় হয়ে উঠছে দিনে দিনে। এমন অবস্থা থেকে বের হতে হলে নজর দিতে হবে সরকারি স্বাস্থ্যসেবার চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনায় সংস্কারের দিকে। বিশেষ করে যারা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবেন, তাদের আলাদা কাঠামোর আওতায় দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে চাকরির শুরু থেকেই। সেই সঙ্গে বেসরকারি খাতকে অবশ্যই আরও অনেক শৃঙ্খলা, সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে’।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জাতীয় বাজেটের অন্তত ১৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রাখার পরামর্শ দিলেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে এ খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ৫ শতাংশ। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বাজেট বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিওএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে কম। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা স্বাস্থ্যসেবাকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি রোগ যাতে না হয়, যাতে মানুষকে হাসপাতালে যাওয়া না লাগে, চিকিৎসার খরচ যাতে কমানো যায়, সে জন্য রোগ প্রতিরোধে আরও বেশি সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য খাতে বাজেট আরও বাড়ানোর।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত আরও কার্যকর করতে সবার সহযোগিতা কামনা করে বলেন, ‘চিকিৎসক থেকে শুরু করে সব পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীরা এবং কর্মকর্তারা যদি আন্তরিকভাবে কাজ করেন তবে চিকিৎসার প্রতি অবশ্যই মানুষের আস্থা বাড়বে’

এমবিবিএস (ঢাকা), এমপিএইচ,
সিসিডি (বারডেম), সিএমইউ

Comments